বাংলাদেশে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আইন বিভাগ তথা জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়ন করে থাকে। জাতীয় সংসদ বিভিন্ন ধরণের কাজ করলেও আইন প্রণয়ন তার মুখ্য বা মৌলিক কাজের আওতাভুক্ত। বাংলাদেশে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে বিল সম্পর্কে ।
আইনের খসড়া বা রাফকে আমরা সাধারণত বিল বলে থাকি। কোন আইন তৈরি করার জন্য এর প্রস্তাবক বা উত্থাপক যে খসড়া প্রস্তাব মহান জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন তাই বিল। এই বিলকে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
১। সরকারি বিল
২। বেসরকারি বিল
সরকারি বিল:
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা যে বিল উত্থাপন করেন তাকে সরকারি বিল বলা হয়। এ বিল জাতীয় সংসদের উত্থাপনের আগেই সরকারী গেজেটে প্রকাশিত হয়। সরকারি বিল উত্থাপনের জন্য ৭ দিনের নোটিশ প্রদান করা হয়।
বেসরকারি বিল:
মন্ত্রী ছাড়া কোন সংসদ সদস্য (সরকারদলীয়, বিরোধীদলীয়, স্বতন্ত্র) যে বিল উত্থাপন করেন তাকে বেসরকারি বিল বলা হয়। তবে এক্ষেত্রে এ বিল শুরুতেই সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয় না। জাতীয় সংসদে উত্থাপনের আগে প্রতিলিপি স্পীকারের নিকট নোটিশসহ প্রদান করতে হয়। ১৫ দিন আগে নোটিশ করতে হয়। বিলটি সংসদে উত্থাপনের অনুমতি চাওয়া হয়। প্রস্তাবটির পক্ষে বিপক্ষে মতামত দিতে সংসদে ভোটের জন্য প্রদান করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্মতি পেলে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
বিলকে আইনে পরিণত করা হয় যেভাবে:
কোন বিল হইক সেটা সরকারি বিল বা বেসরকারি বিল আইনে পরিণত করতে হলে আমরা সাধারণত ৫টি ধাপ দেখতে পাই।
১।
বিল উত্থাপন
২।
প্রথম পাঠ
৩।
দ্বিতীয় পাঠ
৪।
তৃতীয় পাঠ
৫।
রাষ্ট্রপতির সম্মতি
বিল উত্থাপন
মন্ত্রী (সরকারি বিল) বা সংসদ সদস্য (বেসরকারি) বিল উত্থাপন করেন।
সরকারী
বিল উত্থাপনের জন্য ৭ দিন এবং
বেসরকারি বিল উত্থাপনের জন্য ১৫ দিনের নোটিশ প্রদান করা হয়।
প্রথম পাঠ
সরকারী
বিল গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়ার পর এবং বেসরকারি
বিল সংসদে পেশের অনুমতি পাওয়ার পর প্রস্তাবক খসড়া বিলটি প্রথমবারের মতো পঠিত হোক বলে
প্রস্তাব করেন। প্রথম পাঠ শেষ হওয়ার পর প্রস্তাবক নিচের প্রস্তাবগুলো রাখতে পারেন।
১।
বিলটি দ্বিতীয়বার পাঠ করা হোক
২।
খসড়া বিলটি বিবেচনা করার জন্য স্থায়ী কমিটিরি নিকট পাঠানো হোক
৩।
সিলেক্ট কমিটির নিকট পাঠানো হোক
৪।
জনমত যাচাই করার জন্য জনসমক্ষে প্রচার করা হোক
দ্বিতীয় পাঠ
প্রস্তাবক
বিলটি বিবেচনা করার জন্য জাতীয় সংসদে নিকট বিলটি দ্বিতীয়বার পাঠের জন্য অনুরোধ জানাবেন। বিলটি
নিয়ে এবার ব্যাপক আলোচনা হবে। সংসদ
সদস্যরা এসময় প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব আনবেন। সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর স্পীকার ভোট
গ্রহণের ব্যবস্থা করবেন।
তৃতীয় পাঠ
বিলটির
সকল ধারা- উপধারা বিবেচনা ও সংশোধনী গ্রহণ ও বর্জনের পর প্রস্তাবক সংসদে বিলটি তৃতীয়বার
পাঠের অনুরোধ রাখবেন এবং বিলটি চূড়ান্তভাবে গ্রহণের জন্য প্রস্তাব রাখবেন। সংসদ
বিলটি গ্রহণ করবে কি না সে ব্যাপারে স্পীকার হ্যাঁ না ভোটের আয়োজন করবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ
ভোটের সমর্থনে বিলটি গৃহীত হলে স্পীকার সত্যায়িত করে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করবেন। তবে মনে রাখতে হবে সংবিধান
সংশোধনী বিল হলে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট লাগবে।
রাষ্ট্রপতির সম্মতি:
রাষ্ট্রপতি নিকট বিল পাঠানোর পর রাষ্ট্রপতি দুইটি কাজ করতে পারেন।
প্রথমত, ১৫ দিনের মধ্যে তিনি তাতে সম্মতি দিবেন। বিলটি আইনে পরিণত হয়ে যাবে।
অথবা
দ্বিতীয়ত, পুনর্বিবেচনার
জন্য বিলটি সংসদে ফেরত পাঠাতে পারবেন। সংসদ
বিলটি পর্যালোচনা করবে। আবার গৃহীত হলে পুনরায় রাষ্ট্রপতির নিকট পাঠাবেন।
এ পর্যায়ে এসে রাষ্ট্রপতি
৭ দিনের ভিতর সম্মতি দিবেন, না দিলে তিনি সম্মতি দিয়েছেন বলে ধরে নেওয়া হবে। তিনি দ্বিতীয়বার
সংসদে ফেরত পাঠাতে পারবেন না। সেই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির নেই। এবারে বিলটি আইনে পরিণত হয়ে যাবে।
No comments